সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • ইসলামিক এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১০০ জনকে হাজির হওয়ার নির্দেশে গেজেট প্রকাশ সংস্কারবিরোধী দেখানোর চেষ্টা চলছে পরিকল্পিতভাবে: মির্জা ফখরুল ইউএস বাংলার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জব্দকৃত জমি বিক্রির অভিযোগে ফের বিতর্কে তারিক সিদ্দিক নতুন প্রস্তাবে স্থবিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে উদ্বেগ: ফখরুল যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর খামেনির জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার কোনো সুযোগ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শেষের নাটকে মোস্তাফিজের জাদু, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে বাঁচল বাংলাদেশ এশিয়ান কাপে দুর্দান্ত আগমন, তুর্কমেনিস্তানকে গোল বন্যায় ভাসাল বাংলাদেশ নারী দল
  • জাতীয় দলে ঢোকার ফর্মুলা—কে জানে আসল রহস্য?

    জাতীয় দলে ঢোকার ফর্মুলা—কে জানে আসল রহস্য?
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের দল নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই বিতর্ক যেন অবধারিতভাবে জড়িয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই বিতর্ক আরও গভীর ও জটিল আকার নিচ্ছে। অনেক সময়ই প্রশ্ন ওঠে—কোন যুক্তিতে বারবার দলে ফিরছেন লিটন দাস, নাঈম শেখ কিংবা এনামুল হক বিজয়? আর কেন উপেক্ষিত থাকেন নুরুল হাসান সোহান, মোসাদ্দেক হোসেনের মতো পারফর্মাররা?

    নতুন করে এই আলোচনা আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে সদ্য ঘোষিত শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে দল নিয়ে। নির্বাচকদের সিদ্ধান্তে যেমন প্রশ্নবোধক চিহ্ন তৈরি হয়েছে, তেমনি দল নির্বাচন নিয়ে স্বচ্ছতার অভাবও যেন দিনকে দিন প্রকট হচ্ছে। কার পারফরম্যান্স বিচার করা হচ্ছে, আর কার ক্ষেত্রে অতীত-বর্তমান বিবেচনায় আনা হচ্ছে না—তা স্পষ্ট নয় অনেকের কাছেই।

    দলে সুযোগ পাওয়া কিছু খেলোয়াড় সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ঘাটতিতে ভুগছেন, অথচ তবুও নির্বাচকদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। বিপরীতে যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভাল করেছেন, তারা সুযোগের আশায় থেকেও পিছিয়ে পড়ছেন।

    এই অসংগতিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিসিবির ব্যাখ্যা না থাকলেও, ভক্ত-সমর্থকদের হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। শ্রীলঙ্কা সফরের স্কোয়াড যেন সেই পুরনো প্রশ্নগুলো নতুন করে উসকে দিয়েছে—এবং উত্তর খুঁজে পাওয়া এখনও অনেক দূরের পথ।

    দল নির্বাচনে মাপজোখের কারচুপি? কোথাও আলো, কোথাও গভীর ছায়া
    বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের স্কোয়াড নির্বাচন যেন এখন এক রহস্যময় ঘর! কিছু দরজা সব সময় খোলা, আর কিছু দরজা যেন ইচ্ছেমতো বন্ধ রাখা হয়—চাবিটাও থাকে কিছু নির্দিষ্ট হাতেই।

    চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ পড়লেও হঠাৎ করেই লিটন দাসকে ফেরানো হয়েছে শ্রীলঙ্কা সফরের ওয়ানডে স্কোয়াডে। অথচ এই ফরম্যাটে তার শেষ উল্লেখযোগ্য ইনিংস মনে করতে হলে অনেক পাতা উল্টাতে হয় পরিসংখ্যানের খাতায়। তার সাম্প্রতিক ফর্ম, আত্মবিশ্বাস কিংবা ধারাবাহিকতা—কোনো কিছুই আশাজাগানিয়া নয়।
    তবুও প্রশ্নহীনভাবে তার ফেরার নেপথ্যে নির্বাচকদের ব্যাখ্যা—"টি-টোয়েন্টির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় লিটন আছেন, তাই ওয়ানডেতেও তার থাকা জরুরি!"
    এই যুক্তির ওজন কতটা? কে জানে!
    তবে এটুকু বোঝা যাচ্ছে—কোনো এক অদৃশ্য ছকে তিনি বারবার জায়গা পাচ্ছেন, আর অন্যরা সুযোগের আশায় রয়ে যাচ্ছেন আলোর বাইরে।

    সৌম্য, সোহান—তারা কোথায় হারিয়ে গেলেন?
    সৌম্য সরকারের নাম এখন যেন এক শোকগাঁথা। ডিপিএলে রান, গড়, স্ট্রাইক রেট—সব কিছুতেই তিনি ছিলেন লিটনের চেয়ে এগিয়ে। বয়সে দু’জনের ফারাকও নেই বললেই চলে। তবুও সৌম্য বাদ, লিটন দলে। কীসের ভিত্তিতে? বিসিবির চোখে কে তরুণ, কে অভিজ্ঞ—তা কি এখন আর বয়সে নির্ধারিত হয় না?

    আরেকটি বড় প্রশ্ন সোহানকে ঘিরে। মাঠে পারফর্ম, ড্রেসিংরুমে লিডারশিপ, বাইরের দুনিয়ায় সৌজন্য—সবখানেই নুরুল হাসান সোহান একজন আদর্শ ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছবি। তবুও তিনি আছেন উপেক্ষার তালিকায়।
    না, এখানে গায়ের রঙ, চেহারা কিংবা আচরণ—সবকিছুতেই তিনি ‘উত্তীর্ণ’।
    তবে নির্বাচকদের চাহিদার কাঠিন্য বুঝতে বুঝতেই হয়তো তার ক্রিকেট জীবন গড়িয়ে যাবে। প্রশ্ন রয়ে যাবে—তিনি কী কারণে বাদ?

    পারফরম্যান্স না কি পছন্দ—নির্বাচনের মানদণ্ড কী?
    নাঈম শেখের ফিরে আসা যেন এক পক্ষপাতদুষ্ট গল্পের আরেক অধ্যায়। একমাত্র ডিপিএল ভালো করলেই যদি দলে ফেরা যায়, তাহলে বিজয়ের ঠাঁই হলো কোথায়?
    একই টুর্নামেন্টে বিশাল রান করেও নির্বাচকদের ‘দৃষ্টিসীমার বাইরে’ রয়ে গেলেন এনামুল হক বিজয়।

    মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, যিনি বিপিএলে বল হাতে ম্যাচ ঘোরানো পারফরম্যান্স দিয়েছেন, যিনি ব্যাট হাতে ছিলেন ধারাবাহিক, তাকেও দেখা গেল না স্কোয়াডের কোথাও। তার পারফরম্যান্স যেন কেবল শিরোনামেই সীমাবদ্ধ, নির্বাচনের কাগজে তার নাম উঠে না।

    দল নির্বাচন এখন কীসের ভিত্তিতে?
    আজকের নির্বাচনের ছবি এমন—একেক খেলোয়াড়ের জন্য একেক নীতি। কোনো খেলোয়াড়কে এক ফরম্যাটের পারফরম্যান্সে তিন ফরম্যাটে সুযোগ দেওয়া হয়, আর কেউ তিন ফরম্যাটেই ভালো করেও উপেক্ষিত থাকেন।

    জাতীয় দলের স্কোয়াড নির্বাচন যেন এখন এক রাজনৈতিক ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট—যেখানে পারফরম্যান্সের বদলে গুরুত্ব পাচ্ছে পরিচিত মুখ, অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক, আর ‘ভবিষ্যতের পরিকল্পনা’ নামের অস্পষ্ট ছায়া।

    এবং সেই পুরনো শেষ লাইন: প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই
    ভক্তরা প্রশ্ন করে—কেন এমন হচ্ছে?
    উত্তর আসে না।
    আসে ভাষ্য, তত্ত্ব আর গা-বাঁচানো যুক্তি।
    কিন্তু তার ভেতরে থাকে না স্বচ্ছতা, থাকে না ন্যায্যতা।

    এভাবেই দলে জায়গা পাওয়ার গল্প হয়ে উঠেছে এক জটিল ধাঁধা।
    আর সেই ধাঁধার পেছনে যারা সত্যিকারের লড়াকু, তারা প্রতিবারই থেকে যান তালিকার বাইরেই।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ