সাতক্ষীরায় টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, চরম দুর্ভোগে মানুষ


সাতক্ষীরায় টানা সাতদিনের মুষলধারায় বৃষ্টিতে পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বসতবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘরে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল। ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নাগরিক জীবন এখন মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কামালনগর, ইটাগাছা, মধুমোল্লারডাঙি,মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরাসহ বহু এলাকায় হাঁটুপানি জমে আছে। এর মধ্যে পৌরসভার ২, ৩, ৬, ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
ইটাগাছা বিলপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম খোকা জানান, এলাকার মৎস্য ঘেরগুলো খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। বাইপাস সড়কের নিচের স্লুইস গেটটি বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিচ্ছে।
বদ্দীপুর কলোনির গৃহিণী সাজেদা বেগম বলেন, “দশ বছর ধরে জলাবদ্ধতা আমাদের নিত্যসঙ্গী। সাপের ভয়ে রাতে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়।”
মাদ্রাসাছাত্র শাহিনূর রহমান জানান, “তিনবেলা খাবারের জন্য হাঁটু পানি ঠেলে যেতে হয়।” এইচএসসি পরীক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, “রাস্তায় পানি জমে আছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবো কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”
কুখরালি এলাকার শিমুল হোসেন বলেন, “তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। খালের মুখ বন্ধ করে রেখেছে প্রভাবশালী ঘের মালিকরা।” ঘুড্ডেরডাঙির আব্দুল গফুর বলেন, “রামচন্দ্রপুর বিলের পানি উঠেছে বাড়িতে। সাপের ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।”
রসুলপুর এলাকার অ্যাডভোকেট সুধান্য সরকার বলেন, “কোটি কোটি টাকার প্রকল্পেও দুর্নীতির কারণে খাল-নদীর তলদেশ না কেটে, কেবল পাড় উঁচু করে কৃত্রিম গভীরতা দেখানো হয়েছে। ফলে পানি বেরোতে পারছে না।”
নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, “ঘেরের পাশে নেটপাটা অপসারণ, পুরনো ম্যাপ অনুযায়ী খাল-নদী খনন, বিকল স্লুইস গেট সংস্কার ও জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।”
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় দিনে ১৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ জানান, “সেচনালা সংস্কার, কালভার্ট নির্মাণ ও বেতনা নদী খনন চলছে। প্রাণসায়ের খালের মাধ্যমে পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হলে জলাবদ্ধতা কমবে।”
সাতক্ষীরার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা শুধু প্রকৃতি নয়, মানুষের অবহেলা ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন চিন্তার ফল। এখনই সমন্বিত উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি। না হলে বর্ষা এলেই সাতক্ষীরার মানুষকে পানিতে ভেসে থাকতে হবে।
