মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • নারী ফুটবল দলের জন্য অর্ধকোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখে পৌঁছেছে: ইউএনএফপিএ গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১০ জুলাই যমুনা অভিমুখে বিডিআর সদস্যরা, পুলিশের টিয়ার সেল ও গ্রেনেড নিক্ষেপ দেশে ফিরেছেন ৭৩ হাজার হাজি, মৃত্যু ৪৪ জনের ইয়েমেনের তিন বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা, ফের মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ইসলামিক এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১০০ জনকে হাজির হওয়ার নির্দেশে গেজেট প্রকাশ সংস্কারবিরোধী দেখানোর চেষ্টা চলছে পরিকল্পিতভাবে: মির্জা ফখরুল
  • অদম্য মেধাবী মোস্তাফিজুরের স্বপ্ন জজ হওয়া!

    অর্থাভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভর্তির সুযোগ, দুশ্চিন্তায় বাবা-মা

    অর্থাভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভর্তির সুযোগ, দুশ্চিন্তায় বাবা-মা
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    ভর্তি পরীক্ষায় অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান পাঁচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় সম্মান শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেলেও শুধুমাত্র অর্থাভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভর্তির সেই সুযোগ। ছেলের এই অনিশ্চয়তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হতদরিদ্র তার পিতা খোরশেদ আলম ও মাতা মুছুদা খাতুন।

    জানা যায়, দিনাজপুরের পার্বতীপুরের আনন্দবাজার গ্রামের দিনমজুর খোরশেদ আলম ও মুছুদা খাতুনের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার ছোট। বড় দুইবোনের বিয়ে হয়ে চলে গেছেন নিজ নিজ বাড়ীতে। হতদরিদ্র পিতা-মাতার সঙ্গে থেকে গেছে মোস্তাফিজুর রহমান। পরিবারে নেই আর্থিক স্বচ্ছলতা। পিতা দিনমজুরির কাজ পেলে তিন সদস্যের পরিবারের সকালের পেটে ভাত জোটে, আর কাজ না পেলে উপোষ থাকতে হয়। পাঁচ শতকের বসতভিটা মাটি ছাড়া জমিজিরাত বলতে কিছুই নেই তাদের। তবুও শতকষ্ট আর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও মোস্তাফিজুর রহমান তার শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাচ্ছেন। উত্তরা ইসলামিয়া দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ নিয়ে মাধ্যমিক স্তর পেরিয়ে মানবিক বিভাগে এইচএসসিতে ভর্তি হয় ফুলবাড়ী সরকারি কলেজে। গত এইচএসসি পরীক্ষায় সেখানেও সে কৃতিত্বের সাথে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।  

    মোস্তাফিজুর রহমান সম্মান ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের সম্মান (অনার্স) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩০ তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৮তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯৫ তম এবং হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম মেধা তালিকায় ভর্তি সুযোগ পেয়েছে। তবে তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ার ইচ্ছা। যাতে করে সে পড়াশুনা শেষ করে একজন বিচারক হতে পারে।

    অদম্য মেধাবী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দিনমজুর পরিবারে আর্থিক দৈন্যতার মধ্যেও কোনদিন লেখাপড়ার বিষয়ে ফাঁকি দেননি। মনোযোগ দিয়ে চালিয়ে গেছেন তার লেখাপড়া। স্বপ্ন বুনেছেন পড়ালেখা শেষে বড় কিছু হয়ে পরিবারের অভাব-অনটন দূর করাসহ দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার। আজ সেই স্বপ্ন দ্বার প্রান্তে। এখন স্বপ্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ভিভাগে ভর্তি হওয়া এবং পড়াশুনে শেষে বিচারক হওয়ার।

    মোস্তফিজুর আরো জানান, লেখাপড়ার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই শিক্ষকরা তাকে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। এজন্য দুর্গম এই পথটা অনেক সহজ হয়েছে তার জন্য। সে বিশেষ কৃতজ্ঞতা তার ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাইমিনুল ইসলাম স্যার ও প্রভাষক সোহেল রানা স্যারের কাছে। তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনিদের্শনায় আজ তার এই কৃতিত্ব অর্জিত হয়েছে। অর্থাভাবে ভর্তি পরীক্ষার কোন কোচিং করা হয়নি, তবে শেষ দিকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে রংপুরে ফোকাস নামের কোচিং সেন্টারে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র। এরপর বাড়ীর সম্বল একটি গরু ছিল সেটি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন ফি এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ যাবতীয় খরচ চালিয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩০ তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৮তম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯৫ তম এবং হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১তম মেধা তালিকায় ভর্তি সুযোগ পেয়েছে। তবে তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ার ইচ্ছা। যাতে পড়াশুনা শেষে বিচারক হতে পারে। তবে এরই মধ্যে কম্পিউটার শেখার জন্য প্রভাষক মোহাইমিনুল ইসলাম স্যার তাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন।

    মোস্তফিজুর রহমান বলেন, ভর্তির সুযোগ পেলেও পরিবারের অর্থাভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি নিয়ে এখন পড়েছেন বেকায়দায়। এছাড়াও ভর্তির পর সেখানে থাকা খাওয়া ও পড়ালেখার খরচ বাড়তি গলার কাটা। হতদরিদ্র বাবার পক্ষে তা বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এসব দুশ্চিন্তায় কাটছে তার দিন।

    ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের প্রভাষক মো. মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মোস্তাফিজুরকে এগিয়ে নিতে। তার এ অর্জনে কলেজ গর্বিত। তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনাসহ ভর্তির জন্য তাকে সহযোগিতার আহবান জানাচ্ছি।

    অদম্য মেধাবী মোস্তাফিজুর রহমানের দিনমজুর পিতা খোরশেদ আলম বলেন, পরিবারের অভাবের জন্য ঠিকমতো ছেলের লেখাপড়ার খরচও দেওয়া সম্ভব হয়নি। ছেলেটা নিজের চেষ্ঠায় এতোকিছু করেছে। গ্রামের লোকজন এসে বলে, আমার ছেলে নাকি অনেক বড় জায়গায় লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু বড় জায়গায় পড়ার মতো তো আমার সামর্থ্য নেই। ছেলেটা কিভাবে পড়াশুনা করবে এটাই এখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে গেছে। ছেলেটা সব সময় মন মরা হয়ে থাকছে বাড়ীতে। একটা গরু ছিল সেটা বিক্রি করে তো ওর ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে, এখন এমন কোন সম্পদও নেই যে বিক্রি করে ওর লেখাপাড়ার যোগান দেবো। ছেলেটার ভর্তির জন্য সহযোগিতা চান সরকার প্রধানসহ দেশের দানশীল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তিবিশেষের কাছে। সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ, মোস্তাফিজুর রহমান মোবাইল নং-০১৩৩-৩৮৯৭৩৭৭।


    আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন