জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ


রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, অবৈধ টিনশেড ঘরের দখলদারর প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করেন। পরিচালক দায়িত্ব নেওয়ার পর উচ্ছেদের নোটিশ দিয়ে উল্টো সেই দখলদারদের থেকেই টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটটি ৪৭ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৫৮টি কোয়ার্টার বরাদ্দ থাকলেও, অতিরিক্ত ফাঁকা জায়গায় প্রায় সাড়ে পাঁচশ টিনশেড ঘর তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘর ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে আদায় হয় প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা, যা যায় কিছু কর্মচারী ও দখলদারদের পকেটে। অভিযোগ, এর পেছনে একটি সুসংগঠিত চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়।
২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডা. মোমিনুর রহমান সাত দিনের সময় বেঁধে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিশ দেন। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে শুরু হয় টাকা তোলা। ড্রাইভার, অফিস সহায়ক, টেকনিশিয়ানসহ অবৈধ সুবিধাভোগীরা মিলিতভাবে ৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করে পরিচালকের দপ্তরে জমা দেন। তবে অভিযোগ রয়েছে টাকা উঠানো হয়েছে আরও বেশি। যা আদায়কারীরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকেও অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে। সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, গত ৬ এপ্রিল তাকে পরিচালকের কক্ষে ডেকে ৫০ লাখ টাকা তুলে দেওয়ার চাপ দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. ইফতেখার আহম্মেদ ও দপ্তর সম্পাদক ফারুক খান।
কোষাধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাকে চেক প্রস্তুত করতে বলা হয় এবং বিষয়টি যেন গোপন থাকে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়। পরে ডা. ইফতেখার বলেন— “আমরা তিনজন একদিকে, এখন আপনি কী করবেন?”
পরদিনই পদত্যাগ করেন শফিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে দপ্তর সম্পাদক ফারুক খান তাকে ফোন করে বিষয়টি এখানেই শেষ করার অনুরোধ জানান।
ল্যাব বেয়ারার মো. অজিউল্লাহ জানান, “এই টিনশেড ঘরের বাসিন্দারা কেউ ২০ হাজার, কেউ ১০ হাজার, কেউবা ৫ হাজার টাকা করে জমা দেন। তা সমিতির দপ্তর সম্পাদক ফারুক খানের কাছে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে পরিচালককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।”
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গেলে পরিচালক ডা. মোমিনুর রহমান জানান, এসব আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেও অপারগতা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে, কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. ইফতেখার আহম্মেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সেদিন টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। পুরো বিষয়টিই ভিত্তিহীন।”
এই দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি জানা গেছে, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই ইজারা নিয়ে কারসাজির অভিযোগে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ক্যান্টিনটিও বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে নানা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার যেন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে।
এই ঘটনায় ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্তের দাবি জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, যেখানে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, সেখানে পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ এবং অনিয়মের অভিযোগ রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাটের বহিঃপ্রকাশ। বিষয়টি যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
নতুন কাগজ/বিএইচ
