সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • ইসলামিক এনজিওগুলোকে সামাজিক ব্যবসায় এগিয়ে আসার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১০০ জনকে হাজির হওয়ার নির্দেশে গেজেট প্রকাশ সংস্কারবিরোধী দেখানোর চেষ্টা চলছে পরিকল্পিতভাবে: মির্জা ফখরুল ইউএস বাংলার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জব্দকৃত জমি বিক্রির অভিযোগে ফের বিতর্কে তারিক সিদ্দিক নতুন প্রস্তাবে স্থবিরতা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে উদ্বেগ: ফখরুল যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর খামেনির জনসমক্ষে আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার কোনো সুযোগ নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শেষের নাটকে মোস্তাফিজের জাদু, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে বাঁচল বাংলাদেশ এশিয়ান কাপে দুর্দান্ত আগমন, তুর্কমেনিস্তানকে গোল বন্যায় ভাসাল বাংলাদেশ নারী দল
  • সবুজের বুকেও আগুন: চা-বাগানে খরার ছোবল

    সবুজের বুকেও আগুন: চা-বাগানে খরার ছোবল
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর খরায় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা-বাগানে চা-গাছ বিবর্ণ হয়ে মারা যাচ্ছে। নদনদী, ছড়া, জলাশয় ও লেক শুকিয়ে যাওয়ায় চাহিদামতো সেচ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এতে চা উৎপাদনে ভাটা পড়েছে। নতুন কুঁড়ি আসছে না চা গাছে। তাই কাঁচা পাতা উত্তোলনও সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষতি হচ্ছে নতুন প্লান্টেশনের। ফলে চায়ের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাবৃষ্টিতে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে চা শিল্প। পাতা উত্তোলন মৌসুমের শুরুতেই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তাই চা উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন না হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।

    মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও রাজনগরে রয়েছে ৯২টি চা বাগান। তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে মরে যাচ্ছে চা গাছ। প্রুনিং (ছাঁটাই) করা ডালে নেই নতুন কুঁড়ি। দেখা দিচ্ছে নানা রোগ-বালাই। হতাশায় চা সংশ্লিষ্টরা।

    জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৪ মিলিমিটার। ২০২৪ সালে একই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৪৬ মিলিমিটার।

    শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের চিত্র দেখা যায়, সবুজ পাতা নেই চা গাছে। খরায় মরে গেছে প্রুনিং করা গাছ। কিছু কিছু জায়গায় দেওয়া হচ্ছে সেচ।

    চা বাগানের একটি সূত্র জানান, আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে চা শিল্পেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চা গাছ মরে যাচ্ছে। চা গাছের ছায়াদানকারী গাছ উজাড় বন্ধ করা ও চা বাগানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী, নালা, খাল খনন করে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।

    চা শ্রমিক অনিতা কুর্মি বলেন, চা গাছে পাতা নেই। পানির অভাবে মরে যাচ্ছে গাছগুলো। সারাদিনে ৩ থেকে ৪ কেজি পাতা তুলতে পারিনি। আর পাতা তুলতে না পারায় মজুরিও ঠিকমতো পাচ্ছি না। নিত্যপণ্যের উদ্ধগতিতে সংসার চালানো কষ্টকর।

    আরেক চা শ্রমিক সাথি বাউরী বলেন, এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। বাগানে নতুন কুঁড়ি না থাকায় আমাদের কাজ কমে গেছে। মজুরিও কমে গেছে। পাতা না তুললে বাগান কর্তৃপক্ষও মজুরি দেবে না।

    ফিনলে টি’র ভাড়াউড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজার জিএম শিবলী বলেন, প্রচণ্ড খরায় পুড়ছে চা বাগান। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় আছি। তবে যদি কিছুদিনের মধ্যে বৃষ্টি হয়, হয়তো কিছুটা সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যাবে। এই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সেচ প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

    শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, এই সময়ে চা অঞ্চলে ১৫ থেকে ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গত বছরের মার্চ মাসে ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। অথচ চলতি বছরের মার্চে এসে মাত্র ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

    টি প্লেন্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চা শিল্প বৈরী আবহাওয়া ও অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা রক্ষা করতে হলে কৃত্রিমভাবে সেচের পানি ব্যবস্থা করতে হবে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। খরায় বেশিরভাগ বাগানে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গাছ মরে যাচ্ছে।

    বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, চা শিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এ বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০৩ মিলিয়ন কেজি। খরা যেহেতু মৌসুমের শুরুতে এসেছে। এতে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হলেও বাকি মৌসুমজুড়ে কাজ করলে কাটিয়ে ওঠা যাবে। খরায় গাছ মরে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য আমরা বাগান কর্তৃপক্ষকে ছায়াতরু রোপণ, ইয়াং চা গাছে প্রুনিং ও গাছের গোড়ায় কচুরিপানা দিয়ে খরা মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছি। এই পদ্ধতি প্রয়োগ না করলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। প্রতিবছর আগাম প্রস্তুতি নিলে এটি কাটিয়ে ওঠা যাবে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ