ছোট লক্ষণেই বড় বিপদ: বাড়ছে কোলন ক্যানসার


বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যানসার বা কোলোরেক্টাল ক্যানসার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ ধরনের ক্যানসার মূলত বৃহদান্ত্র বা রেকটামে দেখা যায়। সম্প্রতি ভারতের অভিজ্ঞ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. জোসেফ সালহাব সতর্কবার্তা দিয়েছেন তরুণদের উদ্দেশে। তিনি জানান এই ক্যানসারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে, যেগুলো সময়মতো শনাক্ত করা গেলে রোগ প্রতিরোধ বা দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব।
ডা. সালহাব এক ২৫ বছর বয়সী যুবকের উদাহরণ টেনে কোলন ক্যানসারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ওই যুবক একটি সাধারণ কলোনোস্কোপি প্রস্তুতির ভিডিও করেছিলেন, যার ফলে ধরা পড়ে তিনি স্টেজ-৪ কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ডা. সালহাব জানান, এখন তিনি যতো রোগী দেখছেন, তাদের মধ্যে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত তরুণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
কোলন ক্যানসার: কোলন ক্যানসার হচ্ছে বৃহদান্ত্র বা রেকটামের কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্ট এক ধরনের মারাত্মক ক্যানসার। এই রোগের অন্যান্য সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মলের সঙ্গে রক্তপাত, রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া), পেট ব্যথা, দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি, ওজন হ্রাস ইত্যাদি।
কোলন ক্যানসারের প্রধান সতর্ক লক্ষণ: ডা. সালহাব তরুণদের জন্য কোলন ক্যানসারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্ক সংকেত উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো
১. রেটিনাল ব্লিডিং (চোখের রক্তপাত): ডা. সালহাব জানান, এটি তার দেখা এক নম্বর অস্বাভাবিক লক্ষণ, যেটি অনেক ক্ষেত্রে কোলন ক্যানসারের পূর্বাভাস হতে পারে।
২. পেট ব্যথা: যখন কোনও কারণ ছাড়াই ঘন ঘন পেট ব্যথা হয় সাবধান হতে হবে। সাধারণ পেট ব্যথায় ওষুধ খেলে কিংবা বিশ্রাম নিলে আরাম হলেও কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে ব্যথা কমতে চায় না। এবং চিকিৎসা করেও ফল হয় না।
৩. দুর্বলতা বা সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়া: শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়লে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। এটাকে স্বাভাবিক ভেবে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. সালহাব।
৪. মলত্যাগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন: অনেকদিন ধরে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে সেটিও হতে পারে একটি লক্ষণ। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হলে মলত্যাগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দেয়।
৫. খাবারে অনীহা: হঠাৎ করেই খেতে ইচ্ছা না হওয়া বা ক্ষুধা কমে যাওয়ার সমস্যা। যদি দেখেন আপনি অন্যান্য সময় যেভাবে খাবার খেতেন এখন হঠাৎ কোনও কারণ ছাড়াি খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হচ্ছে ক্ষুধাও লাগছে না তবে সাবধান।
৬. কারণ ছাড়াই ওজন হ্রাস: কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎওজন কমে গেলে ভাবতে হবে। কোনও ডায়েট না মেনে যদি ওজন কমে যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে আপনার বিষয়টি জানান এবং তার পরামর্শ নিন।
৭. রাতের ঘামে ভিজে যাওয়া: ঘুমের সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হলে সাবধান হন। এমনকি অনেক সময় ঠান্ডা আবহাওয়াতেও এমন ঘাম হতে পারে।
৮. জ্বরে আক্রান্ত হওয়া: যদি দেখেন কিছু দিন পরপর হালকা বা কম মাত্রার জ্বরে ভুগছেন তাহলে অপেক্ষা না করে চিকিৎসকের কাছে যান। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া বারবার জ্বর আসা কোলন ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ।
বর্তমান সময়ে তরুণদের মধ্যেও যেভাবে কলন ক্যানসারের হার বাড়ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমাদের অনেকেই ভেবে নিই, ক্যানসার শুধু বয়স বাড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। শরীরে যে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ অবহেলা করলে তা হতে পারে ভয়াবহ পরিণতির কারণ। ডা. জোসেফ সালহাবের মত বিশেষজ্ঞরা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে এ বিষয়ে সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং সঠিক জীবনধারা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
দৈএনকে/ জে. আ
