মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • গর্ভবতী নারী কর্মকর্তাকে রাঙামাটিতে বদলি: বেতারের ডিজির বিরুদ্ধে ‘অমানবিকতা’র অভিযোগ আবরার ফাহাদের দেখানো পথেই রাজনীতি করছে এনসিপি: নাহিদ ইসলাম মেন্ডিসের দৃঢ় ব্যাটিংয়ে লঙ্কানদের বড় সংগ্রহের আশা যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জমায়েত নিষিদ্ধ ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মাঝে দ্বিতীয় দফায় ফিরলেন ৩২ বাংলাদেশি জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ: মালয়েশিয়া ফেরত চারজন ৪ দিনের রিমান্ডে অভিষেকেই চমক, এশিয়া কাপে সুপার ফোরে বাংলাদেশ প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণেই ‘মব কালচার’ বৃদ্ধি পাচ্ছে: রিজভী গাজায় প্রাণঘাতী হামলায় ৫ ইসরায়েলি সেনার মৃত্যু চাকরি হারানোর আতঙ্কে রাজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
  • সংসার সামলে বিসিএসে সাফল্য, ইবি শিক্ষার্থী আরিফার অনন্য অর্জন

    সংসার সামলে বিসিএসে সাফল্য, ইবি শিক্ষার্থী আরিফার অনন্য অর্জন
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    বাংলাদেশে বিসিএসে সফলতা পাওয়া অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় সফল হওয়া সহজ নয়, বিশেষ করে যখন কাউকে একসঙ্গে সংসার ও পড়ালেখার ভার সামলাতে হয়। তবে এই চ্যালেঞ্জ জয় করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী আরিফা সুলতানা।

    ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। দীর্ঘ প্রস্তুতির এ পথচলায় তার প্রেরণার উৎস ছিল পরিবার।

    আরিফা সুলতানার শ্বশুর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। তিনি ২০০৭ সালে  মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ ৪.১৯, মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১০ সালে জিপিএ ৪.৬০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১০-১১ সেশনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

    নিজের সাফল্যের অনুভূতি জানিয়ে আরিফা বলেন, আল্লাহর রহমত আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভকামনায় আমার আজকের এই সফলতা। আমি নিয়ামক মাত্র। আমার পরিবারের জন্য এটা খুব আনন্দের। রেজাল্ট দেখে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো সম্ভব না।

    মায়ের অনুপ্রেরণা এবং স্বামীর নিশ্চিন্ত আশ্বাসেই যেন বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন আরিফা সুলতনা। তিনি বলেন, আমার আম্মু অত্যন্ত মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নানা প্রতিকূলতার কারণে পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেননি। সেই স্পৃহা আম্মু আমাদের ছয় ভাইবোনের মধ্যে জাগিয়ে রেখেছেন। আম্মুই অনুপ্রেরণার ভিত্তি আমাদের। বিয়ের পরে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের পেয়েছি আমার লড়াইয়ে ইতিবাচক সমর্থক হিসেবে। বিশেষ করে আমার স্বামী। উনি প্রায়ই বলতেন, ‘তুমি তোমার মতো এগিয়ে যাও। আমি অপেক্ষা করছি।’ এই আশ্বাসই আমাকে নিশ্চিন্ত রাখতো।

    আরিফার সুলতানার স্বামী রবিউল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী একজন অধ্যাবসয়ী মেয়ে। আমার থেকে আমার পরিবার বেশি সাপোর্ট করেছে। আমি শুধু হতাশার সময়গুলোতে পাশে থেকেছি। তার সাফল্যে আমি আনন্দিত।

    বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নের বীজ আরিফার মধ্যে বুনেছিল তার ভাই। তিনি বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়া আমার স্বপ্ন ছিল না। এর মূলে ছিল আমার ভাইয়া। ভাইয়ার পরামর্শে প্রথম বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। আব্বা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করলেও পেয়েছে মানুষের সম্মান আর ভালোবাসা। আমরাও প্রত্যেকে আব্বার মতো সম্মানিত হতে চেয়েছি।

    আরিফার বড় ভাই খুলনা পাবলিক কলেজের সহকারী অধ্যাপক তাকদীরুল গনী বলেন, ভালো কিছু করতে হলে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। এজন্য এইচএসসির সময় থেকেই তাকে সাহস যুগিয়েছি। পরিবারের আগ্রহ ছিল সে ভালো কিছু করুক। আর তার এই সাফল্যে এক্সট্রা কারিক্যুলাম এক্টিভিটিস সহযোগিতা করেছে। আমাদের পুরো পরিবার উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত।

    সংসার সামলে প্রতিদিন পড়াশোনা করেছেন আরিফা। বন্ধ ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সিলেবাস আর বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে টপিক ধরে বই পড়ে শেষ করেছি। অল্প অল্প টার্গেটে। তারপর ওই টপিকটা ডাইজেস্ট থেকে পড়েছি। যা নতুন তা মার্ক করেছি এবং টপিক শেষ হলে মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করেছি। দুর্বলতা থাকলে আবার একইভাবে পড়ার চেষ্টা করেছি। আট বছরের সংসার আর প্রায় পাঁচ বছরের সন্তান সামলে বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হওয়া সহজ ছিল না। পরিবারের সবার সমর্থনই সফলতায় পৌঁছাতে সহযোগিতা করেছে। আর আমি নিয়মিত পড়াশোনা করেছি।

    টানা পাঁচবার ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি আরিফা সুলতানা। তিনি বলেন, আমি ৩৭তম থেকে ৪৪তম বিসিএসে মোট ছয়টি বিসিএস দিয়েছি। পরপর তিনটি বিসিএসে প্রিলি ফেল। ৪র্থ বিসিএস অর্থাৎ ৪১ তম বিসিএসে নন ক্যাডারে আছি। আবার ৪৩তম প্রিলি ফেল। সর্বশেষ ৪৪তম বিসিএসে অর্থাৎ ৬ষ্ঠবারে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেয়েছি।

    যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শুধু লক্ষ্য স্থির রেখে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জীবন থেকে অজুহাত না খুঁজে, আপন হাতে অজুহাতকে দূরে সরাতে হবে। যেহেতু বিসিএস জার্নি বেশ দীর্ঘমেয়াদি আপনাকে বিকল্পভাবে হলেও অর্থনৈতিকভাবে একটু স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছলতা হয়তো সফলতা নিয়ে আসে না কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে যা আপনার মানসিক শক্তি যোগাবে। আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে আরও ভালো করার প্রয়াস পাবেন।

    ঝরে পড়া শিশুদের কল্যাণে কাজ করতে চান আরিফা সুলতানা। তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্ব সর্বোচ্চ সুচারুভাবে পালন করতে চাই। কারণ সততাই সেবা। আর এই সেবার জায়গাটা বিস্তৃত করতে ঝরে পড়া শিশুদের কল্যাণে কাজ করতে চাই।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ

    আরও পড়ুন